নতুন বা পুরাতন আমরা যারাই ব্লগিং এর সাথে পরিচিত এমন লোক খুজে পাওয়া মুশকিল যে ওয়ার্ডপ্রেস চিনে না। ব্লগিং এর জন্য ওয়ার্ডপ্রেস দুর্দান্ত একটি কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS)। আজকে আপনাদের WordPres এর কিছু প্রয়োজনীয় সেটাপ ও প্লগিন নিয়ে আলোচনা করবো। WordPress এ একজন ব্যাবহারকারী অনেক ধরনের সুবিধা পায়, কিন্তু অনেক কিছুই মিসিং থাকে মূল ওয়ার্ডপ্রেস এ। এই মিসিং জিনিস গুলোর পূর্ণতার জন্য আমরা প্লাগিন এর ব্যাবহার করে থাকি। আর ওয়ার্ডপ্রেস ডিরেক্টরি আমাদের সেই প্রয়োজন মিটাচ্ছে।
চলুন মূল আলচনায় আসা যাক, তবে শুরু করার আগে বলে নিচ্ছি অপ্রয়োজনীয় বা চিনেন না এমন প্লাগিন বা নাল কোন প্লাগিন বা থিম ব্যাবহার থেকে বিরত থাকুন। আপনাদের সুবিধার্তে আমি এই প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী প্লাগিন গুলকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করছি , যা সাইট সেটআপ এর পরেই আমাদের প্রয়োজন হয় -
- এস ই ও প্লাগিন
- স্পিড অপটিমাইজেশন
- সিকুউরিটি প্লাগিন
- কন্টাক্ট ফর্ম
- লাইভ চ্যাট
- ব্যাকআপ প্লাগিন
- অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্লাগিন
এস ই ও প্লাগিন
আমরা সবাই চাই আমাদের ওয়েবসাইট রেঙ্কিং এ নিতে। কিন্তু ২০২১ সালে এসে প্রপার অপ্টিমাইজেশন ছাড়া রেঙ্ক করা প্রায় অসম্ভব। এস ই ও প্লাগিন গুলো আমাদের সাহায্য করে একটি ওয়েব পেজ কে সার্চ ইঞ্জিন এর জন্য উপযোগী করে তৈরি করতে। যেহেতু এই পোস্ট টি আপনি পরছেন আমি ভেবে নিচ্ছি আপনি অফপেজ অন পেজ সম্পর্কে জানেন। মুলত এস ই ও প্লাগিন গুলো অনপেজ অপ্টীমাইজেশনের জন্য যথেষ্ট সহায়ক। চলুন দেখে আসি এস ই ও প্লাগিন গুলোর ফিচারঃ
- সাইট এর এস ই ও টাইটেল ও মেটা ডিস্ক্রিপশন আপডেট করা ।
- পেজ রিচ স্নিপেড এর উপযোগী করে তৈরি করা
- স্কিমা সেটআপ করা
- এক্স এম এল সেটআপ করা
- রিডেকশন ফিক্স করা
- ক্যানোনিকাল ইস্যু ফিক্স করা
এছাড়াও প্যারাগ্রাফ স্ট্রাকচার, কি ওয়ার্ড ডেনসিটির মত গুরত্ত পূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখতে সাহায্য করে। বর্তমান সময়ে কয়েকটি পরিচিত এবং ইফেকটিভ এস ই ও প্লাগিন এর হল -
- Yoast
- The Framework
- SEOPress
- Rank Math
এছাড়াও আরও অনেক এস ই ও প্লাগিন আছে তবে ব্যাবহারকারী এবং ফিচার অনুযায়ী উপরের প্লাগিনগুলো সর্বাধিক জনপ্রিয়।
স্পিড অপটিমাইজেশনঃ
২০২১ সালে স্পিড অপটিমাইজেশন রেঙ্কিং এর ক্ষেত্রে একটি গুরত্তপূর্ণ বিষয়। স্পিড এর ক্ষেত্রে সাইটের অপটিমাইজেশন যেমন গুরত্তপূর্ণ তেমনি সার্ভার ও অনেক গুরত্তপূর্ণ বিষয়। সার্ভার আন অপটিমাইজড থাকলে স্পিড বাড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এক্ষেত্রে ভাল হোস্টিং এর কোন বিকল্প নেই। সাধারনত স্পিড অপটিমাইজেশন এর বিষয় গুলো আপনি মেনুয়ালি করতে পারেন। কিন্ত ওয়ার্ডপ্রেস এর প্লাগিন গুলো আপনার কাজকে সহজ করে দেয়। চলুন দেখে আসি প্লগিন গুলো কি বিষয়গুলো অপটিমাইজেশন এর ক্ষেত্রে গুরত্ত দেয় -
স্পিড অপটিমাইজেশন প্লাগিন দিয়ে কি করা যায়?
- ডাটাবেস অপটিমাইজ
- ইমেজ অপটিমাইজ
- কেচ ধরে রাখা এবং কেচিং রুল সেটআপ করা
- সি ডি এন ইন্টিগ্রেশন এর সুবিধা
- এইচটিএমএল, সি এস এস, জাভা স্ক্রিপ্ট অপটিমাইজ করা
- ক্রিটিকাল সি এস অপটিমাইজ
- অপ্রয়োজনীয় ডাটাবেস টেবিল ও অন্যান্য বিষয় গুলো রিমুভ করা
- লেজিলোড ফিচার
- ডিসেবল / এনাবল স্ক্রিপ্ট
প্লাগিন ভেদে ফিচার এর তারতম্য লক্ষ করতে পারেন। তবে প্রায় সকল স্পিড অপটিমাইজেশন প্লাগিন এ আপনি কেচ, কম্প্রেশন এর ফিচার গুলো পাবেন। কিছু জনপ্রিয় ফ্রি স্পিড অপটিমাইজেশন প্লাগিন দেখতে পারেন -
- WP Fastest Cache
- WP Super Cache
- W3 Total Cache
- Autooptimize
এছাড়া জনপ্রিয় কিছু পেইড প্লাগিন এর ববহার দেখা যায় এর মধ্যে Wp Rocket অনেক পাওয়ারফুল ও জনপ্রিয় একটি সফটওয়ার। আপনার সাইট এর স্পিড চেক করার জন্য google page speed insigt, Pingdom বা gtmatrix ব্যাবহার করতে পারেন।
সিকুউরিটি প্লাগিন
যেকোনো সাইট এর জন্য সিকিউরিটি অত্যন্ত গুরত্তপূর্ণ বিষয়। যদিও ওয়ার্ডপ্রেস এর ডিফল্ট সিকিউরিটি সিস্টেম অনেক শক্তিশালি তারপরও সার্ভার সাইটের কিছু বিষয় ও ডিফল্ট সিস্টেম গুলো আপডেট করা জরুরি। এই ক্ষেত্রে ভাল ও নির্ভরযোগ্য হোস্টিং চয়েজ এর কোন বিকল্প নেই।
সিকিউরিটি প্লাগিন গুলো কি করে?
- ডিরেক্টরির প্রপার ফাইল পারমিশন দেয়া
- Brute Force আটকানো
- ওয়েবসাইট স্কেন ও মনিটর ও অডিট করা
- সিকিউরিটি থ্রেড ঠিক করা
- আন অথরাইজড এক্সেস মনিটর করা
- সিস্টেম ফাইল চেঞ্জ মনিটর করা ।
- স্প্যাম থেকে সাইটকে প্রোটেকশন করা
- ফায়ারওয়েল সেটআপ
এইসব কাজগুলো আপনি ম্যানুয়ালি ও করতে পারেন তবে সাধারন ইউসার দের জন্য প্লাগিন ব্যাবহার করে কাজ করা অনেক সহজ এবং কম সময় সাপেক্ষ। কয়েকটি জনপ্রিয় প্লাগিন সিকিউরিটি প্লাগিন - Sucuri, Wordfence, iThemes Security, All In One WP Security এছাড়াও আরও কিছু সিকিউরিটি প্লাগিন রয়েছে সবার কাজ প্রায় একই রকম। তবে এদের প্রিমিয়াম ভার্সন এ আরও অনেক সুবিধা রয়েছে।
কন্টাক্ট ফর্মঃ
কন্টাক্ট ফর্ম সাধারনত কন্টাক্ট পেজ এ থাকে যার মাধ্যমে সাইট এর ব্যাবহারকারীরা সাইট এর এডমিন এর সাথে যোগাযোগ করে থাকে । সাধারনত স্প্যাম এড়ানোর জন্য এই ফর্ম এর ব্যাবহার বেশি দেখা যায়। তবে কন্টাক্ট ফর্ম ছাড়াও আরও অনেক রকম ফর্ম ব্যাবহার করা হয় ব্যাবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য। ওয়ার্ডপ্রেস ব্যাবহারকারীরা একসময় কন্টাক্ট ফর্ম ৭ এর বিকল্প না পেলেও এখন অনেক প্লাগিন পাওয়া যাচ্ছে ফ্রিতেই ।
কন্টাক্ট ফর্ম ব্যাবহার এর সুবিধাঃ
- পারসোনাল মেইল কে স্প্যাম ফ্রি রাখা
- ম্যাসেজ এর ট্র্যাক রেকর্ড রাখা
- কাস্টমার দের জন্য যোগাযোগ সহজ করা
- ইমেইল লিস্ট তৈরি করা
- সহজ ও নিরাপদ ভাবে ডাটা সংগ্রহ করা
যদিও প্রায় ওয়ার্ডপ্রেস ডিরেক্টরির প্রত্যেকটি জনপ্রিয় কন্টাক্ট ফর্ম এর ই পেইড ভার্শন আছে তবুও ফ্রি ভার্সন গুলোও সাধারণ কাজের জন্য বেশ উপযুক্ত। কিছু জনপ্রিয় ওয়ার্ডপ্রেস কন্টাক্ট ফর্ম এর নাম নিচে দেয়া হল -
- WPForms
- Formidable Forms
- Ninja Forms
- Contact form 7
বলে রাখা ভাল অনেক থিম এই দেখা যায় নিজেদের বিল্ড ইন ফর্ম থাকে। আপনি চাইলে সেটাও ব্যাবহার করতে পারেন।
লাইভ চ্যাটঃ
সেলস বেজড যেকোনো ওয়েবসাইট এর জন্য এটি একটি গুরত্তপূর্ণ বিষয়। একটি গবেষণায় দেখা যায় যে প্রায় ৫১% কাস্টমার লাইভ চ্যাট কে পছন্দ করে। ৪৪% কাস্টমার মনে করে এটি একটি দারুন ফিচার সরাসরি সাপোর্ট এ কথা বলার জন্য। আর সবচেয়ে বড় কথা এটা একটা কস্ট ইফেকটিভ সলিউশন এবং সেলস কনভারশন বাড়ায়। ইউ এস এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ৪৫% গ্রাহক অর্ডার করার মাঝেই চলে যায় শুধুমাত্র তাদের প্রশ্নের উত্তর সাথে সাথে না পাওয়ার কারনে । চলুন দেখে আসি লাইভ চ্যাট এর কিছু সুবিধা -
- লাইভ চ্যাট সাপোর্ট টিম এর প্রোডাক্টিভিটি বুস্ট করে
- কাস্টমার দের এঙ্গেজমেন্ট বাড়ায়।
- কাস্টমারদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে সাহায্য করে
- দ্রুত রিসপন্স এর একটি মাধ্যম
কিছু জনপ্রিয় ফ্রি এবং পেইড প্লাগিন এর নাম নিচে দেয়া হল -
- Livechat
- Crisp chat
- Zendesk Chat
- Tidio
- tawk
- Live Chat Unlimited
- Live Chat by Formilla
ব্যাকআপ প্লাগিনঃ
ব্যাকআপ, ব্যাকআপ এবং ব্যাকআপ! এই ৩ টি জিনিস ই অনেক গুরত্তপূর্ণ। সাধারনত সার্ভার গুলো ডেটা ব্যাকআপ রাখে একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর। কিন্ত যেকোনো সময় ই আমাদের সার্ভার বা ওয়েবসাইট এ প্রব্লেম হতে পারে । তাই অনাকাঙ্ক্ষিত দূরঘটনা এড়ানোর জন্য ব্যাকআপ এর কোন বিকল্প নেই । তবে ওয়ার্ডপ্রেস এর ব্যাকআপ প্লাগিন গুলো এইক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী এই ব্যাকআপ প্লাগিন গুলো গুগল ড্রাইভ বা মেগার মত ক্লাউড প্লাটফর্মে সাইট এর ব্যাকআপ ট্রান্সফার করে রাখে যা খুবি নিরাপদ এবং কম সময় সাপেক্ষ।
ব্যাকআপ প্লাগিন এর সুবিধাঃ
- অটোমেটিক ব্যাকআপ শিডিউল
- নতুন ব্যাবহারকারীদের জন্য সহজ
- অনেকগুলো জায়গায় ব্যাকআপ ট্রান্সফার এর সুবিধা
- ব্যাকআপ অটো অপটিমাইজেশন
- মাল্টিসাইট সাপোর্ট
- সহজে রিস্টোর এবং মাইগ্রেশন এর সুবিধা
কিছু জনপ্রিয় ফ্রি এবং পেইড ব্যাকআপ প্লাগিন এর নাম নিচে দেয়া হল -
- Akeeba Backup Plugin (Not available in Wordpress.org)
- All-in-One WP Migration
- BackupBuddy
- UpdraftPlus
- WPVivid
অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্লাগিনঃ
উপরের প্লাগিন গুলো ছাড়াও আরও কিছু প্রয়োজনীয় প্লাগিন রয়েছে যেইগুলো প্রয়োজনভেদে বিভিন্ন সাইটে এ ব্যাবহার হয়ে থাকে । যেমন - স্পাম ফিল্টার, সোশ্যাল শেয়ার, সাইট বিল্ডার, ওপ্টিন প্লাগিন ও ফাইল মেনেজার । প্লাগিন এর ব্যাবহার আমাদের কাজ সহজ করে। তবে অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় প্লাগিন এর ব্যাবহার সাইটের গতি কমিয়ে দেয়। তবে সোশ্যাল শেয়ার, সাইট বিল্ডার এর মত প্রয়োজনীয় জিনিশগুলো এখন অনেক থিম এই দেয়া থাকে। তবে সম্পূর্ণ বিষয় আপনার সাইট এবং প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করবে ।
আমরা সাইটে ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল দেয়ার পর পরই ২টি প্রয়োজনীয় সেটআপ করে নিব । ১। সাইট রেডি হবার আগে ডিইনডেক্স করে রাখা যাতে অপ্রয়োজনীয় কোন ফাইল/ পেজ ইনডেক্স থেকে বিরত রাখা যায়। সাইট লাইভ করার পর টিক উঠিয়ে দিতে ভুলবেন না ২। সাইটের পারমালিঙ্ক সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি করে ফেলা বলে রাখা ভাল আমি পারমালিঙ্ক বলতে ইউ আর এল স্ট্রাকচার কে বুঝিয়েছি যা ওয়ার্ড প্রেস এর ডিফল্ট সিস্টেম এ থাকে।
এছাড়া আরও কিছু অপ্রয়োজনীয় বিষয় থাকে যেমন - ডিফল্ট কমেন্ট,পোস্ট ও থিম যা রিমুভ করে ফেলবেন। চলুন এবার WordPress সেটআপ এর পর কিছু প্রয়োজনীয় প্লাগিন নিয়ে কথা বলি। আজ এই পর্যন্তই। আর্টিকেল টি ভাল লাগলে শেয়ার দিতে ভুলবেন না।