ক্র্যাপওয়্যার কি, কিভাবে ক্র্যাপওয়্যার থেকে সুরক্ষিত থাকবেন?

আজকাল আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে আমরা কম্পিউটার এর শরণাপন্ন হচ্ছি। দিন যত সামনে এগোচ্ছে ততোই সবকিছু হচ্ছে প্রজুক্তি নির্ভর। আর এই প্রজুক্তির একটি বড় অংশ হচ্ছে কম্পিউটার। আজকাল এমন হয়ে গেছে যে, আমাদের কম্পিউটার ছাড়া চলতে গেলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ঝামেলা পোহাতে হয়। আর এই কম্পিউটার নির্ভর যুগে আমরা সুবিধার চেয়ে আমরা একটু বেশিই অসুবিধায় পড়ছি। এর অনেকগুলো কারন রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের আক্রমন এবং পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করা।

বর্তমান কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে ম্যাক্সিমামই তাদের ল্যাপটপ কিংবা ডেক্সটপ এ উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম  (Operating System) ব্যবহার করছে। এর মধ্যে অনেকেই ম্যাক এবং লিনাক্স ব্যবহার করেন তাদের প্রয়োজন এবং পছন্দ অনুযায়ী। আর এই উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের মধ্যে ম্যাক্সিমাম ব্যবহারকারীই উইন্ডোজ ১০ (Windows 10) ব্যবহার করেন। ভাইরাস এর আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উইন্ডোজ ১০ (Windows 10) এর সাথে রয়েছে ডিফল্ট অ্যান্টিভাইরাস (Windows Defender). এটি অন্য সব সাধারন অ্যান্টিভাইরাস এর তূলনায় অনেক ভালো কাজ করলেও কিছু ক্ষেত্রে আমাদেরকে থার্ড পার্টি অ্যান্টিভাইরাস গুলো ব্যবহার করতেই হচ্ছে।

➤ আরও জানুনঃ Cyber Security কি? সাইবার সিকিউরিটি এর প্রয়োজনিয়তা।

উইন্ডোজ ১০ (Windows 10) এর এই Windows Defender বিভিন্ন ধরনের Spyware, Malware থেকে পিসিকে সুরক্ষিত রাখতে পারলেও ক্র্যাপওয়্যার (Crapware)  নিয়ে আমাদের প্রায়ই ঝামেলায় পড়তে হয়। আমাদের অনেকেরই ক্র্যাপও্যার সম্পর্কে ধারনা নেই, আজকে আমরা জানবো ক্র্যাপওয়্যার (Crapware)  কি এবং কিভাবে আপনার পিসিকে ক্র্যাপওয়্যার থেকে সুরক্ষিত রাখবেন।

ক্র্যাপওয়্যার কি ?

Crapware

ইন্টারনেট এবং Wikipedia র ভাষায় ক্র্যাপওয়্যার (Crapware) মানে প্রি – ইন্সটলড (Pre-Installed) সফটওয়্যার। অনেক সময় আমরা পিসিতে ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ডাউনলোড করি। আর অধিকাংশ সফটওয়্যার ডাউনলোড করার পর ইন্সটল করার ক্ষেত্রে দেখা যায় ঐ সফটওয়্যারের সঙ্গে আরো কিছু অতিরিক্ত সফটওয়্যার ইন্সটল হয়ে যায়। আর এই অতিরিক্ত ইন্সটল হওয়া সফটওয়্যার গুলোকে ক্র্যাপওয়্যার বলে।

ক্র্যাপওয়্যারের ক্ষতিকর দিকগুলো

নরমালি ক্র্যাপওয়্যার (Crapware) মানেই যে ভাইরাস এবং এটি যে সব সময় আপনার পিসির জন্য ক্ষতিকারক এমনটি ভাবা ভুল। কিন্তু ক্র্যাপওয়্যার থেকে সব সময় পিসিকে সুরক্ষিত রাখা উচিৎ, আর এর জন্য আপনাকে পিসিতে ক্র্যাপওয়্যার ব্লক করে রাখতে হবে। কারন ক্র্যাপওয়্যার (Crapware) আপনার কোন কাজে আসবে না, এটি শুধু মাত্র আপনার প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারের সাথে অতিরিক্ত অ্যাডন (Addon) বা মডিউল হিসেবে ইন্সটল হয়েছে। পিসিতে সফটওয়্যার ইন্সটল করার সময় একটু কেয়ারফুল হলে এই ধরনের সমস্যাগুলো থেকে বাচা যায়। আমরা অনেকেই পিসিতে সফটওয়্যার ইন্সটল করার সময় শুধু Next এ ক্লিক করে ইন্সটলেশন সম্পন্ন করি। কিন্তু কি ইন্সটল করছি তা তো একবার দেখা উচিৎ।

ক্র্যাপওয়্যারের সবচেয়ে ক্ষতিকারক দিকগুলো হচ্ছে, আপনার অজান্তে পিসিতে ক্রিপ্টোজ্যকিং করা। ক্রিপ্টোজ্যকিং বলতে আপনার পিসির হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে অন্য কেউ হয়তো বিটকয়েন মাইনিং করছে। এই রকম ও হতে পারে যে, কেউ আপনার পিসির সবগুলো ডাটা এই ক্রিপ্টোজ্যকিং এর মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে।

➤ আরও জানুনঃ ক্র্যাক উইন্ডোজ এবং অরিজিনাল উইন্ডোজ এর মধ্যে পার্থক্য

অনেক সময় দেখা যায়, এই ক্র্যাপওয়্যার (Crapware) গুলো আপনার পিসির স্টার্টআপ সেকশনে এনাবেল হয়ে থাকার কারনে ব্যাকগ্রাউ্ন্ড এ নতুন সব প্রচেস রান হয় এবং পিসি অনেক স্লো হয়ে যায় এছাড়াও পিসির বুট টাইম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিছু ক্র্যাপওয়্যার রয়েছে যেগুলো কম্পিউটার স্টোরেজ এর অনেক জায়গা দখল করে নেয়। আর এ জন্যই ক্র্যাপওয়্যার এর ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনা করে পিসিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ক্র্যাপওয়্যার ব্লক করে রাখা উচিৎ।

কিভাবে ক্র্যাপওয়্যার ব্লক করবেন?

উইন্ডোজ ১০ এ অ্যান্টি – ক্র্যাপওয়্যার (Crapware) ফিচার থাকলে ও এটি সবসমসয় ডিজেবল অবস্থায় থাকে, আপনার প্রয়োজনে আপনাকে এই ফিচারটি এনাবেল করে নিতে হবে। অ্যান্টি – ক্র্যাপওয়্যার ফিচারটি চালু করার জন্যে আপনাকে উইন্ডোজ পাওয়ারশেল (Windows PowerShell – Admin) ওপেন করতে হবে। Administrator মোডে পাওয়ারশেল ওপেন করার জন্য কীবোর্ড থেকে Start+X প্রেস করুন।

Start Menu

এখানে ক্লিক করার পর Windows PowerShell ওপেন হবে।

Power Shell

নিচের কোডটি কপি করে উইন্ডোজ পাওয়ারশেলে প্লেস করুন এবং এন্টার বাটন প্রেস করুন।

Set-MpPreference -PUAProtection 1
Power Shell Admin

এই কাজটি করলেই আপনার পিসিতে ক্র্যাপওয়্যার (Crapware) প্রোটেকশন এনাবেল হয়ে যাবে। আপনি চাইলে এটি ডিজেবল ও করে রাখতে পারেন। এটি ডিজেবল করার জন্য নিচের কমান্ডটি প্রয়োগ করুন।

Set-MpPreference -PUAProtection 0

আপনার পিসিতে ক্র্যাপওয়্যার (Crapware) এনাবেল করা আছে নাকি ডিজেবল করা আছে, আপনি চাইলে খুব সহজেই এটি দেখে নিতে পারেন। এটি দেখার জন্য উইন্ডোজ পাওয়ারশেল এর অ্যাডমিন মোডে গিয়ে নিচের কমান্ড দুটো পর এন্টার করুন।

$Preferences = Get-MpPreference
$Preferences.PUAProtection
Power Shell Admin

যদি উপরের চিত্রের মতো 1 দেখায় তাহলে বুঝবেন আপনার পিসিতে ক্র্যাপওয়্যার (Crapware) এনাবেল করা আছে। আর যদি 0 দেখায় তাহলে বুঝতে হবে এটি ডিজেবল করা আছে।

➤ আরও জানুনঃ জনপ্রিয় ৫টি পিএইচপি ফ্রেমওয়ার্ক।

এভাবেই আপনি উইন্ডোজ ১০ এর ডিফল্ট অ্যান্টি – ক্র্যাপওয়্যার ফিচারটি চালু করতে পারবেন। আপনার পিসিতে অ্যান্টি – ক্র্যাপওয়্যার ফিচারটি এনাবেল করার পর, যে কোন সফটওয়্যার ইন্সটল করার সময় যদি কোন ক্র্যাপওয়্যার ধরা পড়ে সেটি উইন্ডোজ ডিফেন্ডার ব্লক করে দেবে। আপনি চাইলে আপনার পিসির উইন্ডোজ ডিফেন্ডার থেকে ক্র্যাপওয়্যার এর হিস্টোরি দেখে নিতে পারবেন।

যে কোন ধরনের ভাইরাস বা ম্যালওয়্যারের হিস্টোরি দেখার জন্য প্রথমে উইন্ডোজ ডিফেন্ডার ওপেন করুন।

Windows Defender

এখান থেকে Virus & threat protection এ ক্লিক করুন।

Windows Defender

এখান থেকে Threat History তে ক্লিক করুন।

Virus History

এখানে আপনার পিসি থেকে ব্লক করা সবগুলো ভাইরাস এর হিস্টোরি দেয়া থাকবে, আপনি চাইলে Remove All বাটনে ক্লিক করে হিস্টোরি ক্লিন করে দিতে পারবেন।

সব ধরনের শক্তিশালী ভাইরাস এর আক্রমন থেকে আপনার পিসিকে সুরক্ষিত রাখতে চাইলে আপনিও ব্যবহার করতে পারেন থার্ড-পার্টি অ্যান্টিভাইরাস। আমাদের সফটওয়্যার কালেকশনে রয়েছে বেস্ট সব সফটওয়্যার কালেকশন, TOS SOFTWRE SHOP থেকে আজই খুঁজে নিন আপনার পিসির জন্য বেস্ট অ্যান্টিভাইরাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *